বাংলাদেশ   বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪  

শিরোনাম

ধ্বসে পড়ছে প্রাচীন স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন ‘চৌধুরী বাড়ি’

uploads/reporter_image/Mahbubul_Alam_Minto.jpg

মো. মাহবুবুল আলম মিন্টু

রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০৮ পিএম   /    ৮৯ বার পড়া হয়েছে

ধ্বসে পড়ছে প্রাচীন স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন ‘চৌধুরী বাড়ি’

ধীরে ধীরে ধ্বসে পড়ছে প্রাচীন স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন হিসেবে পরিচিত ‘চৌধুরী বাড়ি’। অযত্ন-অবহেলা, মালিকদের উদাসীনতা ও বয়সের ভারে ইতোমধ্যে ভেঙ্গে গেছে ভবনটির বৃহৎ একটি অংশ। অপর অংশটিও ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থায় রয়েছে। প্রায় দেড়শ’ বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক ভবনটি দাঁড়িয়ে আছে জীর্ণ শীর্ণ অবস্থায়।

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার ঢাকা-রায়পুর মহাসড়কের পাশে রাখালিয়া এলাকায় চৌধুরী বাড়িটির অবস্থান। জেলা শহর থেকে এর দূরত্ব ১০ কিলোমিটার এবং উপজেলা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার। প্রায় ১০ শতাংশ জমির উপর নির্মিত ভবনটি। পুরো বাড়িটিতে রয়েছে ৩০ একর সম্পত্তি। বাড়ির মালিকগণ ও এলাকাবাসির সঙ্গে আলাপ এবং সরেজমিন গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

চৌধুরী পরিবারের বংশধর যুবলীগ নেতা আবু সাঈদ চৌধুরী শাকিল বলেন, আমরা যতোদূর জানি এটি প্রায় দেড়শ’ বছরের ঐতিহাসিক ভবন। মোঘল স্থাপত্যকলার একটি অনন্য নিদর্শন। এটি তৈরিতে কারিগর এনে এখানেই ইট পুড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। জানালার গ্রিল, নকশা ও দরজা-জানালার কাঠ এবং ছাদে লাগানো লোহার মোটা বারগুলো নৌ-যোগে আনা হয়েছে কলকাতা থেকে। অনেক ইতিহাসের স্বাক্ষী এই চৌধুরী ভবন। বংশানুক্রমিকভাবে আমরা এটাতে বসবাস করলেও বংশধরদের অন্যান্য লোকজন ভবনটি নিয়ে উদাসীন। কর্মের কারণে একেকজন একেক জায়গায় রয়েছেন। তাই কেউই দায়িত্ব নিয়ে ভবনটি মেরামত করেননি। ইতোমধ্যে ভবনের অর্ধেকের মতো অংশ ভেঙ্গে পড়েছে। অন্য অংশটিও যায় যায় অবস্থা। মেরামত করতে গেলেও এটির নকশা ঠিক রেখে সংস্কার করতে পারেন এমন কারিগরও এলাকায় নেই। তাই কাউকে দিয়ে যেনোতেনো ভাবেও মেরামত করা যাচ্ছে না। বরং অনভিজ্ঞ কেউ এটি ধরতে গেলে ধ্বসে পড়ার আশংকাও বিদ্যমান।

সরেজমিন দেখা গেছে, প্রায় ১০ শতাংশ জমির উপর নির্মিত ভবনটি জীর্ণ শীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। স্থানে স্থানে পলেস্তরা খসে পড়ছে। ভেঙ্গে গেছে দরজা-জানালা। নকশাগুলো পড়ে পড়ে অবস্থা। অনেক স্থানে ছাদের ঢালাই ভেঙ্গে গেছে। কোনোমতে আটকে রয়েছে লোহার বারের সঙ্গে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় দোতালায় কেউ যায় না। নিচের কক্ষগুলো অব্যবহৃত থাকায় ঘুটঘুটে অন্ধকার। এখানে সেখানে পড়ে রয়েছে অব্যবহৃত জিনিসপত্র। ভবনটির একাংশের ছাদে নতুন করে ঢালাই দিয়ে বসবাসের চেষ্টা করা হচ্ছে। সেখান দিয়েও চুইয়ে পড়ছে। স্যাঁত স্যাঁতে হয়ে রয়েছে ভবনের দেওয়াল ও মেঝে। মূল ভবনে এখন আর কেউই বসবাস করছেন না। ভবন লাগোয়া পিছনে নতুন ভবন তৈরি করে সেখানে থাকছেন তারা। ভবনটির সামনে রয়েছে বড় একটি পুকুর ও সবজি বাগান। বিভিন্ন ধরনের ফল ও ফুলের গাছ পুরো বড়িটির সৌন্দর্য ধরে রেখেছে।

বাড়িটির বাসিন্দা শাকিল চৌধুরী আরো জানান, সোনাপুর গ্রামের প্রখ্যাত জমিদার প্রচুর ভূ-সম্পত্তির অধিকারী বিট্রিশ ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মরহুম অলি উল্যা চৌধুরী ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৎকালীন বার্মা থেকে আগত রাজমিস্ত্রী দ্বারা প্রাচীন সৌন্দর্যের চৌধুরী বাড়ির এ ভবনটি নির্মাণ করেন। যা বৃহত্তর নোয়াখালীর মোঘল স্থাপত্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। অলি উল্যা চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার ছেলে মরহুম তছলিম উদ্দিন চৌধুরী ব্রিটিশ ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান এবং চৌধুরী বাড়ির মালিকানায় নিযুক্ত হন। ১৯৬৩ সালে তার মৃত্যুর পর মরহুমের ছেলে মরহুম তহির উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী এই বাড়ির দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন। তিনি পরপর দুই বার সোনাপুর ইউনয়নের চেয়ারম্যান নির্বচিত হন। মরহুমের মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই তায়েফ উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী ৭৩-৭৭ পর্যন্ত অত্র এলাকার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান এবং চৌধুরী বাড়ির রণাবেণ করেন। তায়েফ উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার ছেলে মরহুম তোজাম্মেল হোসেন দুলাল চৌধুরী বাড়ির দায়িত্ব পান। তিনি ১৯৭৭ -১৯৮৫ সাল পর্যন্ত একটানা ওই এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৮৫- ১৯৯০ পর্যন্ত  তিনি রায়পুর উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৯৬ সালে দুলাল চৌধুরী লক্ষ্মীপুর- ২ আসনে রায়পুর থেকে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। পর পর তিনবার রায়পুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সনে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন ২০১৩ সন পর্যন্ত। ২০১৭ সনে তিনি মারা যান। এরপর থেকে শাকিল চৌধুরী হাল ধরেন বাড়িটির। তাঁর চাচারা থাকলেও তাঁরা রয়েছেন কর্মস্থল ঢাকায়। সেখানেই তাঁরা স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।

 

রিলেটেড নিউজ

রামগতিতে কমছে ‘মহিষা দই’ উৎপাদন

রামগতিতে কমছে ‘মহিষা দই’ উৎপাদন

মিসু সাহা নিক্কন : প্রতিদিন প্রায় তিন টন মহিষের দুধ উৎপাদিত হয় রামগতিতে! এই হিসাব থেকে ধারণা করা হয়, এখানে বছরে তিন হাজ...বিস্তারিত


রামগতির ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি

রামগতির ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি

মিসু সাহা নিক্কন : লক্ষ্মীপুরের রামগতি বাজারের মিষ্টির বেশ পুরোনো ঐতিহ্য আর দারুণ খ্যাতি রয়েছে। যেকোনো উৎসব-পার্বণ...বিস্তারিত



সর্বপঠিত খবর

ভেজা সুপারিতে মেশানো হচ্ছে হাইড্রোজ

ভেজা সুপারিতে মেশানো হচ্ছে হাইড্রোজ

মো. মাহবুবুল আলম মিন্টু : লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে পুকুর ও উন্মুক্ত জলাশয়ে সুপারি ভিজিয়ে দূষিত করা হচ্ছ...বিস্তারিত


পাহাড়ের পর্যটনে চলছে বিষাদের ছায়া, হতাশা কাটিয়ে ওঠার আশা

পাহাড়ের পর্যটনে চলছে বিষাদের ছায়া, হতাশা কাটিয়ে ওঠার আশা

উপকূল ডেস্ক: : ‘চলো দোতং পাহাড় জুম ঘরে, পূর্ণিমা রাত বর্ষা জুড়ে জীবন জুয়ার আসর বসাবো’ গানের মতো পর্যটকরাও স...বিস্তারিত



সর্বশেষ খবর