শিরোনাম
মো. জহিরুল ইসলাম
রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪, ০১:৩৯ পিএম / ৬০ বার পড়া হয়েছে
লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় প্রতিদিন প্রায় ৩০ টন বর্জ্য সংগ্রহ হয়। এসব বর্জ্যের স্তূপ দিন দিন বড়ই হচ্ছে। এটি কমানোর জন্য পোড়ানো হচ্ছে আগুনে। আর এর থেকে নির্গত দুর্গন্ধ এবং ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য তিন বছর আগে স্যানেটারি ল্যান্ডফিল নির্মাণ করা হলেও তা এখনও অকেজো। এতে বর্জ্যগুলো সড়কের পাশে বা জনবহুল এলাকায় ফেলা হয়। ভরাট করা হয় পুকুর ও নিচু জমি। পৌর কর্তৃপও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিপাকে রয়েছে। এটি এখন পৌরসভার ‘গলার কাঁটায়’ পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে স্যানেটারি ল্যান্ডফিল এলাকায় গিয়ে আশপাশে বর্জ্যের বড় বড় স্তূপ দেখা যায়। আবার কয়েকটি স্থানে আগুনে পোড়াতে দেখা যায় বর্জ্য। এমনিতেই ওই এলাকায় বাতাসে ভাসছে বর্জ্যের দুর্গন্ধ। এর ওপর পলিথিন ও প্লাস্টিক আগুনে পোড়ানোর কারণে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে বায়ুমণ্ডলে। লক্ষ্মীপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের ইটেরপুল এলাকায় সড়ক বিভাগের একটি বড় পুকুর বর্জ্য দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। আগুনে পুড়িয়ে ও পুকুর ভরাট করেও কমানো যাচ্ছে না পরিমাণ। দিন দিন ভরাট করার মতো পৌর শহরের পুকুর বা নিচু জমিও কমে যাচ্ছে। এজন্য ল্যান্ডফিলের আশপাশের খালি জমিতে তা ফেলা হচ্ছে। একসময় এ জমিগুলোতে চাষাবাদ হতো ধানসহ বিভিন্ন ফসল।
সূত্র জানায়, ১৯৭৬ সালে লক্ষ্মীপুর পৌরসভা গঠিত হয়। প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভায় এখন ১৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। এর প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ৫ হাজার মানুষের বসবাস। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ৪৮ বছরেও এ পৌরসভায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সঠিক কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা যায়নি। এতে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় যত্রতত্র বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। গত ২০২১ সালে পৌর এলাকার লক্ষ্মীপুর-মজুচৌধুরীর হাট সড়কের পাশে পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডে যুব উন্নয়ন ভবনের পেছনে একটি স্যানিটারি ল্যান্ডফিল স্থাপন করা হয়। তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ (সেক্টর) প্রকল্প স্যানেটারি ল্যান্ডফিলটি বাস্তবায়ন করে এলজিইডি, ডিপিএইচই ও লক্ষ্মীপুর পৌরসভা। প্রায় ৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পটির যৌথ অর্থায়ন করে বাংলাদেশ সরকার, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও ওপিইসি ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশলান ডেভেলপমেন্ট।
এদিকে প্রকল্পটির মাধ্যমে বর্জ্য থেকে পচনশীল এবং অপচনশীল বর্জ্য পৃথকীকরণ করে কাজে লাগানোর কথা ছিল। পচনশীল বর্জ্য দিয়ে জৈব সার এবং অপচনশীল (পলিথিন, প্লাস্টিক) বর্জ্য দিয়ে তেল উৎপাদন করা বা উৎপাদনকৃত কারখানায় সরবরাহ করার কথা। এ ছাড়া সংগ্রহকৃত মানববর্জ্যও প্রক্রিয়াজাত করে সার তৈরির জন্য ল্যান্ডফিল পাম্প হাউস তৈরি করা হয়। তবে এ েেত্র কিছু নির্দেশনা দেয় দাতা সংস্থা। কিন্তু সরকার ও দাতা সংস্থার দেওয়া নির্দেশিত শর্ত ‘কারিগরি ও আর্থিকভাবে সহায়তা পেতে ল্যান্ডফিল স্টেশন নির্মাণের আগে ওই এলাকায় যেসব বর্জ্য ফেলা হয়েছিল, পৌর কর্তৃপ তা স্বল্প সময়ের মধ্যে অপসারণ করবে’। কিন্তু সে শর্ত পূরণ করতে পারেনি পৌরসভা। সংগ্রহকৃত বর্জ্য যত্রতত্র ফেলা এবং আগুনে পুড়িয়ে পরিবেশ দূষণের কারণে প্রকল্প ‘থমকে’ গেছে। এতে গত তিন বছর ধরে অলস পড়ে আছে ল্যান্ডফিলটি। এমতাবস্থায় বর্জ্যগুলো পৌরবাসী ও পৌর কর্তৃপরে গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, প্রতিদিন পাঁচটি ট্রাক-ছোট ট্রাক, ৩৫টি ভ্যানের মাধ্যমে ৮২ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী বাজারসহ শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে। এরপর এ বর্জ্য লক্ষ্মীপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে উত্তর তেমুহনী এলাকায় ফেলা হয়। পরে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ওই বর্জ্য সেখান থেকে ল্যান্ডফিল এলাকায় নেওয়া হয়। এর মধ্যে উত্তর তেমুহনী এলাকায় বর্জ্যের দুর্গন্ধে পথচারীসহ এ রুটে চলাচলকারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এর বিপরীত পাশেই ভাড়া ভবনে পৌরসভা কার্যালয় অবস্থিত।
ল্যান্ডফিল এলাকায় বর্জ্য দিয়ে দখল করে রাখা জমির মালিক ইমতিয়াজ ইমু বলেন, ল্যান্ডফিল এলাকায় আমাদের ৭৭ শতাংশ জমি রয়েছে। পৌর কর্তৃপ জোরপূর্বক তাতে বর্জ্য ফেলা শুরু করে। বাধা দেওয়ায় হুমকির শিকার হতে হয়েছে। পরে আদালতে ১৪৪ ধারায় মামলা করি। এরপরও গত দুই বছর ধরে বর্জ্য ফেলে বড় বড় স্তূপ করে রেখেছে। এরকম আরও কয়েকজন ভুক্তভোগী রয়েছে।
ল্যান্ডফিল এলাকার বাসিন্দা কৃষক মো. আলম বলেন, ল্যান্ডফিলের মুখেই আমাদের বসতি। দুটি ঘরে আমরা ১১ জন লোক বসবাস করি। আমাদের শিশুরাও রয়েছে। বর্জ্যের দুর্গন্ধে আমরা টিকতে পারি না। আবর্জনায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার কনজারভেশন ইন্সপেক্টর ফয়েজ আহম্মদ জানান, পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডে প্রতিদিন ৩০ টনেরও বেশি বর্জ্য সংগ্রহ হয়। এর ৪০ ভাগই অপচনশীল। এগুলো দিয়ে একসময় সরকারি-বেসরকারি খালি জমি ভরাট করা হত। ২০২১ সালে সরকারি ও দাতা সংস্থার অর্থায়নে ৪ একর জমিতে ল্যান্ডফিল স্থাপন করা হয়। এতে মানব বর্জ্য ও গৃহস্থালির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পৃথক ইউনিট রয়েছে। তবে অপচনশীল বর্জ্য রিসাইকেল ইউনিট নেই। এ অপচনশীল বর্জ্য বাছাইয়ের জন্য দৈনিক হাজিরায় ১৬ জন পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। কয়েকটি কারণে আর্থিক সুবিধা বন্ধ হওয়ায় পরিচ্ছন্নকর্মীরা এখন আর কাজ করছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া বলেন, জনবল ও অর্থ সংকটের কারণে ল্যান্ডফিলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বন্ধ রয়েছে। এতে বাধ্য হয়ে ল্যান্ডফিলের আশপাশে বর্জ্য স্তূপ করতে হচ্ছে। তবে পূর্বের প্রকল্প থেকে আর্থিক সহায়তা চলমান থাকলে সঠিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা যেত। এর মধ্যে নতুন আরেকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে বর্জ্য থেকে জৈব সার ও জ্বালানি তেল উৎপাদন করা যাবে। চলতি বছরেই প্রকল্পটি পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সাইফুল ইসলাম শরীফ বলেন, আবর্জনার দুর্গন্ধে শ্বাসনালিতে ইনফেকশন হয়ে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।
[প্রতিবেদনটি ঢাকা পোস্টের সৌজন্যে প্রকাশিত]
উপকূল ডেস্ক: : লক্ষ্মীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ৩ জন নিহত ও ২০ জন আহতের ঘটনায় তথ্য ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে...বিস্তারিত
উপকূল ডেস্ক: : লক্ষ্মীপুরে একটি বাসে গ্যাস নেওয়ার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তিনজন নিহত ও অন্তত ২০ জন দগ্ধ হয়েছে। ...বিস্তারিত
উপকূল ডেস্ক: : আন্দোলনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌ...বিস্তারিত
উপকূল ডেস্ক: : বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর অধঃস্তন পুলিশ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিভাগীয় পদোন্নতি পরীক্ষা অনুষ্ঠি...বিস্তারিত
মো. মাহবুবুল আলম মিন্টু : অভিন্ন সার্ভিস কোড বাস্তবায়ন এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের স্থায়ী নিয়োগের দাবিতে মানববন্ধন ...বিস্তারিত
উপকূল ডেস্ক: : প্রায় দেড় মাস আগে লক্ষ্মীপুরে বন্যা হয়েছে। এক মাসের মাথায় বেশিরভাগ এলাকার পানি নেমে গেলেও কিছু কি...বিস্তারিত
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ - © 2024 দৈনিক উপকূল প্রতিদিন | Developed By Muktodhara Technology Limited